সকালে খালি পেটে চিরতা ভেজানো পানি খাওয়ার উপকারিতা
আপনি কি, সকালে খালি পেটে চিরতা ভেজানো পানি খাওয়ার উপকারিতা নিয়ে জানতে চাচ্ছেন তাহলে এই পোস্টটি আপনার জন্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ। চিরতা একটি অত্যন্ত উপকারী ভেষজ উদ্ভিদ, যা প্রতিনিয়ত সকালে চিরতা ভেজানো পানি পান করলে আপনার শরীরের জন্য অনেক উপকার পাবেন।
সকালে চিরতা ভেজানো পানি পান করলে মানব দেহের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধির
পাশাপাশি সর্দি, কাশি, জ্বরের প্রবণতা কমে। এছাড়াও চিরতা ভেজানো পানি পান
করলে যে সকল উপকারিতা পাবেন তা বিস্তারিত এই পোস্টে আলোচনা করা হবে। তবে চলুন
শুরু করা যাক।
পেজ সূচিপত্রঃ সকালে খালি পেটে চিরতা ভেজানো পানি খাওয়ার উপকারিতা
- সকালে খালি পেটে চিরতা ভেজানো পানি খাওয়ার উপকারিতা
- চিরতা হজম শক্তি বৃদ্ধি করে
- চিরতা রক্ত পরিশোধক হিসেবে কাজ করে
- চিরতা ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে সহায়ক
- চিরতা রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ায়
- চিরতা লিভারের জন্য উপকারী
- চিরতা ওজন কমাতে সহায়ক
- চিরতা ত্বকের ব্রণ, ফুসকুড়ি ও অ্যালার্জি কমাতে সহায়ক
- চিরতা রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে সহায়ক
- সকালে খালি পেটে চিরতা ভেজানো পানি খাওয়ার উপকারিতা- শেষ কথা
সকালে খালি পেটে চিরতা ভেজানো পানি খাওয়ার উপকারিতা
সকালে খালি পেটে চিরতা ভেজানো পানি পান করা একটি প্রাচীন আয়ুর্বেদিক অভ্যাস, যা শরীরকে দিনের শুরুতে এনার্জি প্রদান করে থাকে। চিরতায় থাকা অ্যান্ড্রোগ্রাফোলাইড নামক যোগ অ্যান্টি অক্সিডেন্ট ও অ্যান্টি ইনফ্লেমেটরি গুণসম্পন্ন, যা রাতভর জমে থাকা টক্সিন শরীর থেকে বের করে দেয়। এতে লিভার ও কিডনির কার্যক্ষমতা বাড়ে এবং হজম শক্তির উন্নয়ন হয়। গবেষণায় দেখা গেছে চিরতা পানি পান করলে রক্তের শর্করতা নিয়ন্ত্রণে থাকে। তিতা স্বদযুক্ত হওয়ার কারণে এটিকে প্রথমে খেতে অসুবিধা হলেও, এটি পাকস্থলীকে উদ্দীপ্ত করে গ্যাস অম্বল কমায় এবং কোষ্ঠকাঠিন্য দূর করে।
প্রতিদিন সকালে ৫-১০ গ্রাম চিরতা রাতে পানিতে ভিজিয়ে রেখে সকালে ছেঁকে পান করলে ওজন কমায় এবং ত্বকের উজ্জ্বলতা বৃদ্ধি করে। নিয়মিত এই পানি পান করলে সাধারণত সর্দি, জ্বর, কাশি, বিভিন্ন রোগ থেকে সহজে মুক্তি পাওয়া যায়। তবে গর্ভবতী মহিলা ও ঔষধ সেবনকারীদের অবশ্যই ডাক্তারের পরামর্শ নেওয়া উচিত। এই সাধারণ অভ্যাস টি আপনার শরীরকে ভিতর থেকে পরিষ্কার রাখবে এবং দীর্ঘমেয়াদি স্বাস্থ্য রক্ষা করবে। তাই এই অভ্যাসটি আমাদের প্রত্যেকের গড়ে তোলা উচিত, যাতে আমরা প্রতিনিয়ত সুস্থ থাকতে পারি।
চিরতা হজম শক্তি বৃদ্ধি করে
চিরতা একটি তিতা স্বদযুক্ত ভেষজ উদ্ভিদ, যা শতাব্দীর পর শতাব্দী ধরে হজম শক্তি বৃদ্ধিতে ব্যবহার হয়ে আসছে। এর তিক্ততা কারণে এটি শরীরের বিশেষ ধরনের হজম এনজাইম ও পাকস্থলীর রস উৎপাদন বাড়াতে সাহায্য করে, যা খাবার ভাঙা ও শোষণকে সহজ করে তোলে। চিরতায় থাকা প্রাকৃতিক বিটার কম্পাউন্ড পেটকে সক্রিয় রাখে এবং হজম প্রক্রিয়াকে দ্রুততর করে। বিশেষ করে যাদের হজম শক্তি দুর্বল খাবার হজম হতে সময় নেয় তাদের জন্য চিরতা অত্যন্ত কার্যকারী। এটি পেটের গ্যাস পেট ফাঁপা ও এসিডিটি কমিয়ে হজমন্ত্রকে স্বাভাবিক রাখতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে।
চিরতার অন্যতম বিশেষ গুণ হলো লিভার পরিশোধনে এর কার্যকারিতা। লিভার শক্তিশালী থাকতে পুরো হজমতন্ত্রই ভালোভাবে কাজ করে, আর চিরতা লিভারের বিষাক্ততা দূর করতে ও লিভারের এনজাইম স্বাভাবিক রাখতে সাহায্য করে, ফলে ক্ষুধা বাড়ে, খাবার দ্রুত হজম হয় এবং শরীর শক্তি পায়। এছাড়াও অন্ত্রের ক্ষতিকর জীবাণু ধ্বংস করতে সক্ষম, যা ডায়রিয়া পেট ব্যথা বা অস্বাভাবিক মলত্যাগের মতো সমস্যা কমাতে সাহায্য করে। অনেক সময় অনিয়ত খাদ্যাভ্যাস, অতিরিক্ত তেল জাতীয় খাবার, মানসিক চাপ বা ঘুমের অভাবে হজম ক্ষমতা কমে যায়। চিরতা এসব ক্ষেত্রেও পেটকে শান্ত রাখে ও হজম শক্তি ফিরিয়ে আনতে সহায়ক।
চিরতা সাধারণত পানিতে ভিজিয়ে খালি পেটে পান করা হয় যা শরীরকে প্রাকৃতিকভাবে পরিষ্কার করে। নিয়মিত চিরতা সেবনে শরীরের টক্সিন কমে যায় এবং হজন্ত্র আরো শক্তিশালী হয়। তবে যেকোন ভেষজের মতোই চিরতা পরিমিত পরিমাণে গ্রহণ করা উচিত এবং অতিরিক্ত সেবন এড়ানো জরুরী। সার্বিকভাবে, চিরতা হলো এমন একটি ভেষজ যা প্রাকৃতিকভাবে হজম শক্তি বৃদ্ধি করে পেটের নানা সমস্যা কমায় এবং শরীরকে ভেতর থেকে সুস্থ রাখতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে।
চিরতাা রক্ত পরিশোধক হিসাবে কাজ করে
চিরতা একটি তিক্ত স্বাদের ভেষজ উদ্ভিদ যা হিমালয়ের পাহাড়ি অঞ্চলে প্রচুর পরিমাণে জন্মায়। আয়ুর্বেদ চিকিৎসায় এটি কিরাততিক্ত নামে পরিচিত এবং হাজার বছর ধরে রক্ত পরিশোধক হিসেবে ব্যবহৃত হয়ে আসছে। এই উদ্ভিদ রক্ত থেকে অপ্রয়োজনীয় বিষাক্ত পদার্থ বা টক্সিন অপসারণ করে শরীরের সামগ্রিক স্বাস্থ্য রক্ষা করে। বিশেষ করে চর্মরোগ অ্যাকনে একজিমা এবং অন্যান্য ত্বকের সমস্যায় এটি অত্যন্ত কার্যকর। চিরতার তিক্ততা রক্তকে পরিশোধিত করে প্রদাহ কমায় এবং রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ায়। ঐতিহ্যবাহী চিকিৎসায় যেমন জ্বর ম্যালেরিয়া এবং লিভারের সমস্যায়ও ব্যবহার হয়। চিরতায় সক্রিয় উপাদান যেমন স্বারটিয়ামারিন এবং অ্যামারোজেনটিন রয়েছে যা অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট হিসেবে কাজ করে। এটি রক্ত সঞ্চালন উন্নত করে শরীরের অভ্যন্তরীণ পরিচ্ছন্নতা বজায় রাখে। বাংলা ঘরোয়া চিকিৎসায় চিরতার জল খাওয়া একটি সাধারণ অভ্যাস, যা সকালে খালি পেটে নেওয়া হয়। চিরতা রক্ত পরিশোধক হিসেবে কাজ করে তার বৈজ্ঞানিক ভিত্তি রয়েছে। গবেষণায় দেখা গেছে যে এর সক্রিয় যৌগগুলো অ্যান্টি-ইনফ্লেমেটরি এবং অ্যান্টিব্যাকটেরিয়াল প্রভাব দেখায়, যা রক্তের অশুদ্ধতা দূর করে। লিভারকে শক্তিশালী করে টক্সিন ফিল্টার করতে সাহায্য করে, ফলে রক্ত পরিশোধিত হয়।


অর্ডিনারি আইটির নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।
comment url